ভিলেজ ফাউন্ডেশনের ৫ম বর্ষপূর্তি ও ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ২০০ চারাগাছ বিতরন ও অসহায়দের উদ্দেশ্যে কুরবানী মাংস বিতরণ
মোহাম্মদ পলাশ মিয়া, বিশেষ প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় Beat Plastic Pollution — এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সামাজিক সেবামূলক ও সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত সংগঠন ভিলেজ ফাউন্ডেশন উদযাপন করল তাদের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে এক ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচি। এ আয়োজনে স্থানীয় জনগণ, স্বেচ্ছাসেবক ও তরুণ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
উল্লেখযোগ্যভাবে সংগঠনটি ৫ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে এলাকায় ২০০টিরও বেশি ফলজ ও বনজ চারাগাছ রোপণ করে, যার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয় রোধ, অক্সিজেন সরবরাহ ও জলবায়ু ভারসাম্য রক্ষার একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়।
ঈদ-উল-আযহার মূল শিক্ষা কুরবানী ও ত্যাগ—এই বিশ্বাস থেকেই ভিলেজ ফাউন্ডেশন আয়োজন করে একটি গরু কুরবানীর ব্যবস্থা; যার গোশত সুষ্ঠুভাবে অসহায়, দুস্থ ও নিম্নআয়ের প্রায় শতাধিক পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়।
২০২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভিলেজ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করে চলেছে। ইতোমধ্যে সংগঠনটি ১০ হাজারের বেশি চারাগাছ রোপণ, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রমসহ নানা মানবিক কার্যক্রমে সরব ভূমিকা রেখে চলেছে।
২০২৩ সালে তারা পেয়েছে “পরিবেশবান্ধব অ্যাওয়ার্ড”, যা সংগঠনটির কর্মপরিধি ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে।
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন সংগঠনের বিভিন্ন পদে থাকা সদস্য ও তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি সাজ্জাদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. হানজালা, পরিচালক সাকিব মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাজ্জাদসহ আরও সদস্য এবং এলাকার বিভিন্ন স্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সকলেরই লক্ষ্য ছিল গাছ রোপণের মাধ্যমে আগামী দিনের জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা এবং সমাজে মানবিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়া।
ভিলেজ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়,
“আমাদের লক্ষ্য কেবল উৎসবে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা চাই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে। আগামী বছরগুলোতে আরও বৃহৎ পরিসরে বৃক্ষরোপণ, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।”
Village Foundation একটি সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত সেবামূলক সংগঠন; যা পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তরুণদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই সংগঠন ইতোমধ্যেই স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে।
“শিক্ষা, শান্তি ও মানবতার কল্যাণে আগামীর পথে…” এই মহৎ স্লোগানকে সামনে রেখে সমাজসেবামূলক যুব সংগঠন ভিলেজ ফাউন্ডেশন সফলভাবে অতিক্রম করেছে তাদের পাঁচ বছরের পথচলা। ২০২১ সালের ৫ জুন প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি গত পাঁচ বছরে সমাজ উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
পঞ্চবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সংগঠনটি এবছর কোরবানি ঈদে হাতে নেয় ব্যতিক্রমধর্মী কিছু কর্মসূচি। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার পাশাপাশি তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে পরিবেশ রক্ষার বিষয়েও। “সবার জন্য ঈদের আনন্দ”—এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় গরু কোরবানি।
ভিলেজ ফাউন্ডেশন পঞ্চবার্ষিকী উপলক্ষে ঈদের দিন গরু কোরবানি করে সেই মাংস শতাধিক হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মাঝে বিতরণ করে। এতে ঈদের আনন্দ পৌঁছে যায় সমাজের সেইসব মানুষের কাছে, যারা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ঈদের দিনে ভালো খাবার থেকেও বঞ্চিত থাকেন।
সংগঠনের একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ঈদের প্রকৃত আনন্দ তখনই পূর্ণতা পায় যখন তা সবাই মিলে উপভোগ করতে পারে। আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস সেই লক্ষ্যেই।”
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা রোধে জনসচেতনতা তৈরি করা ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন এবার ২০০টির বেশি পরিবেশবান্ধব গাছের চারা রোপণ করেছে। স্কুল, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট ও গ্রামীণ জনপদে এসব বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালিত হয়।
ভিলেজ ফাউন্ডেশনের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জানান, “আমরা শুধু আজ নয়, ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাজ করছি। একটি সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের এ প্রয়াস।”
পাঁচ বছরে যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে ভিলেজ ফাউন্ডেশন
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভিলেজ ফাউন্ডেশন নানা রকম সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সংগঠনের উল্লেখযোগ্য কিছু কার্যক্রম নিচে তুলে ধরা হলো:
সমাজসেবা ও মানবিক সহায়তা: দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি ত্রাণ বিতরণ ও সহায়তা।
পরিবেশ রক্ষা: নিয়মিত বৃক্ষরোপণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও পরিবেশ সচেতনতা ক্যাম্পেইন।
রক্তসেবা: মুমূর্ষু রোগীদের জন্য জরুরি রক্তদানে কার্যকর ভুমিকা।
চোখের চিকিৎসা: বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষার আয়োজন এবং দরিদ্র রোগীদের সেবাদান।
শিক্ষা সহায়তা: দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও পড়ালেখার সুযোগ তৈরির চেষ্টা।
ভিলেজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি জানান, “আমাদের লক্ষ্য শুধু সহযোগিতা নয়, আত্মনির্ভরশীল ও সচেতন সমাজ গড়ে তোলা। ভবিষ্যতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যুবসমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন ইতিবাচক নেতৃত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ। আমরা সেই পথেই হাঁটছি।”
স্থানীয়দের প্রশংসা ও সম্পৃক্ততা
ভিলেজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। অনেকেই বলেন, “এই সংগঠনটি সমাজের অবহেলিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু সাহায্য নয়, সচেতনতা গড়ে তুলেছে, তরুণদের সম্পৃক্ত করেছে।”
একটি যুব সংগঠন হিসেবে ভিলেজ ফাউন্ডেশন প্রমাণ করেছে, সৎ ইচ্ছা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিরলস পরিশ্রম থাকলে ছোট সংগঠনও বড় পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারে। তাদের পঞ্চবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কোরবানির আনন্দ বিতরণ এবং পরিবেশ রক্ষায় গাছ রোপণের কর্মসূচি শুধু একটি উদযাপন নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিশ্রুতি—একটি মানবিক, সচেতন ও টেকসই সমাজের পথে অগ্রযাত্রা।